অণুগল্প : সূত্রহীন
লিখেছেন লিখেছেন আমীর আজম ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১১:৫৭:০১ রাত
- আসসালামু আলাইকুম স্যার।
- ওয়ালাইকুম আসসালাম।
দরজার দিকে তাকিয়ে সালামের জবাব দেয় ডা.তমাল। দরজায় দাঁড়িয়ে আছে ১২-১৩ বছরের একটি ছেলে। নাম হাশেম আলী। ডাক্তার সাহেব জিজ্ঞেস করে....
- হাশেম আলি, কিছু বলবে?
- জি স্যার।
- বলো।
- স্যার আমার প্রেশারটা একটু মাপবেন?
- কেন? তোমার প্রেশারটা মাপতে হবে কেন?
- স্যার, মনে হচ্ছে প্রেশারটা লো হয়ে গেছে।
- কিভাবে বুঝলা প্রেশার লো হইছে?
- স্যার মাথাটা ঘুরতেছে, আর সর্দি লাগছে,, সাথে একটু কাশিও হচ্ছে।
মুচকি হেসে ডা. তমাল বলে.......
- ওওওও। কিন্তু হাশেম আলী, একটা যে সমস্যা দেখা দিল।
- কি সমস্যা স্যার?
- আমার কাছে যে প্রেশার মাপার মেশিনটা আছে এটা বড়দের জন্য। এটা দিয়ে তো তোমার মাপা যাবে না। তোমার জন্য যে মেশিন দরকার সেটাতো আমার কাছে নাই।
- আচ্ছা ঠিক আছে স্যার।
মলিন মুখে চলে যায় হাশেম আলী।
*****************
ডা. তমাল। সদ্য এমবিবিএস কমপ্লিট করেছে। আপাতত থানা শহরের একটা বেসরকারি হাসপাতালে জব করে। আর হাসপাতালেরই একটা রুম চেম্বার বানিয়ে টুকটাক রোগী দেখে। মাঝে মাঝে " একের ভিতরে সব " টাইপের বিসিএসের একটা বইয়ে চোখ বোলানোর চেষ্টা করে।
.
হাসপাতালের সামনে ছোট্ট একটা চায়ের দোকান। দোকানদারের নাম লালু মিয়া। মাথা গরম হয়ে গেলে এই লালু মিয়ার দোকানের লাল চা খেয়ে মাথা ঠান্ডা করে ডাক্তার সাহেব।
.
চা বানিয়ে দেয় হাশেম আলী। লালু মিয়ার ভাগিনা। চা কিভাবে বানাতে হয় এটা এখন হাশেম আলীর মুখস্থ হয়ে গেছে। একটা লেবুর টুকুরা, দুই টুকরা আদা, আর দুই চামুচ চিনি। মাঝে মাঝে ডাক্তার সাহেবের সাথে মজা করে হাশেম আলী।
- স্যার, চিনি কি ঘুইটা দিমু,, নাকি ঘুটমু নাহ।
- মানে?
- মানে স্যার, না ঘুটলে চিনিটা নিচে পড়ে থাকবে, ধীরে ধীরে গুলবে। খায়া মজা পাবেন।
ডাক্তার সাহেব হা করে তাকিয়ে থাকে। বলে কি ছেলেটা। এর বুদ্ধির প্রশংসা করতেই হয়।
*************
পৌষ মাসের শীত। প্রচন্ড ঠান্ডা। ঠান্ডায় চা খাওয়ার নেশাটা যেন কয়েকগুণ বেরে গেছে ডাক্তার সাহেবের। চা খায় আর হাশেম আলীর সাথে চলে তার খুনসুটি।
.
এই প্রচন্ড ঠান্ডায়ও হাশেম আলী নির্বিকার। খালি পা, হাফ প্যান্ট আর একটা হাফ শার্ট পরে দিব্যি চলাফেরা করে। মাথা গরম হয়ে যায় ডাক্তার সাহেবের। ডাক দেয় লালু মিয়ারে.....
- ওই মিয়া, এদিক আও।
- জি স্যার।
- জেলের ভাত খাইছো কোনদিন। পুলিশের লাঠির ঘা যেদিন পিঠে পড়বে সেদিন সোজা হইবা মিয়া।
- ক্যান স্যার? আমি কি করলাম?
- এই যে একটা ছোট ছেলেরে দোকানে রাখছো। এটা তো অপরাধ। তার উপরে এই ঠান্ডার মধ্যে কোন কাপড় চোপড় কিনে দেও নাই। শিশুশ্রমের একটা মামলা করলে কি অবস্থা হবে তোমার বুঝতে পারছো।
- স্যার আপনি ভুল বুঝতেছেন।
- ঠিক টা বোঝাও দেখি মিয়া, কি বুঝাইবা।
- স্যার ওর বাবাও ছিল ওর মতো। প্রচন্ড ঠান্ডায়ও পাতলা কাপড় আর খালি পায়ে ঘুরে বেড়াত। বলতো তার নাকি ঠান্ডা লাগে না। বরং গরম কাপড় পড়লেই নাকি তার শরীর খারাপ হয়ে যায়।
.
শুনতে থাকে ডাক্তার তমাল।
.
- কত করে বোঝাইতাম স্যার, মা মরা ছেলে একটা তোমার। নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নেও। তোমার কিছু হলে ছেলেটার কি হবে? গুরুত্ব দিত না স্যার। তারপর একদিন জোর করে বাজারে নিয়ে গেলাম। জুতা আর একটা পুরাতন জ্যাকেট কিনে দিলাম। এই জুতা আর জ্যাকেট কিনে দেয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে মারা গেল সে।
- কেন মারা গেল?
- ওই ঠান্ডা লেগে স্যার। একদিন রাতে প্রচন্ড জ্বর, সর্দি, কাশি আর শ্বাসকষ্ট । তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। ডাক্তার সাহেব বললেন নিউমোনিয়া না কি জানি হইছে। কিন্তু চিকিৎসা শুরু করার আগেই সব শেষ।
- তাই নাকি?
- জি স্যার।
- এই গাঁজাখুরি গল্প কই পাইছো?
- গল্প না স্যার। ঘটনা সত্যি। এলাকার সবাই জানে।
- এলাকার সবাইকে তোমার এই গল্প বিশ্বাস করাতে পারলেও আমাক পারবা না।
.
হাশেম আলীকে নিয়ে দোকান থেকে বেড়িয়ে আসে ডাক্তার তমাল। সোজা বাজারে নিয়ে গিয়ে একজোড়া জুতা আর একটা জ্যাকেট কিনে দেয়।
*************
দরজায় ধুপধাপ শব্দে ঘুম ভেঙে যায় ডাক্তার সাহেবের। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত তিনটা। প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে দরজা খোলে। দরজায় দাঁডিয়ে আছে লালু মিয়া। চোখে মুখে অস্থিরতা আর উদ্বিগ্ন ভাব।
- কি ব্যাপার লালু মিয়া, তুমি এত রাতে?
- স্যার তাড়াতাড়ি চলেন স্যার। হাশেম আলী কেমন জানি করতেছে।
- কি হইছে তার?
- স্যার খুব জ্বর আর কাশি। সাথে শ্বাসকষ্ট।
জ্যাকেটটা গায়ে জড়াতে জড়াতে লালু মিয়া সাথে দ্রুত হাটতে থাকে ডাক্তার সাহেব। মনে মনে হিসাব করে। জুতা আর জ্যাকেট কিনে দেয়ার কতদিন হলো জানি? ঠিক এক সপ্তাহই তো।
বিষয়: বিবিধ
৭৭৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন